• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

প্রবীণ নিবাস

মৃত্যুর খবর ছাড়া কেউ আসে না বাবা-মাকে দেখতে

  • ''
  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক:

তিনি প্রবীণ নিবাসে ছিলেন আমাদের কাছে, তিনি বলতেন পরিবারকে খুব মিস করেন। গত দুই মাসে কয়েক দফা অসুস্থ হয়েছিলেন, পরিবারকে খবর দিয়েও আনাতে পারিনি। ঈদ গেল, ঈদের দিনও তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কত কথাই না বললেন। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। বিকেলেও হাঁটছিলেন, সন্ধ্যায় তিনি নিবাসের রুমে ঘুমন্ত অবস্থায় একাই মারা গেলেন। খবর দিলাম পরিবারকে, মুহূর্তেই পরিবারের সবাই এসে হাজির, কান্নাকাটি। আমি শুধু চেয়ে দেখি আর ভাবি জীবন, আহারে জীবন' নিবাসে বসবাসকারী এক প্রবীণের মৃত্যুর পর  এভাবেই বলছিলেন বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞানের (বাইগাম) উপপরিচালক (প্রশাসন) মহসীন কবির।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধিভুক্ত ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত বাইগামে ৩৬ জন প্রবীণ বসবাস করতেন। এরমধ্যে চলতি সপ্তাহে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিবাসে বসবাসকারী অধিকাংশ প্রবীণরাই ব্যক্তিজীবনে সফল ছিলেন। অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশ সেরা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলেন, এরপর কর্মক্ষেত্রেও বেশ সফল ছিলেন। তাদের ছেলে মেয়েরাও সমাজের উচ্চ শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। চাকরী জীবন থেকে অবসরের পর নানা ঘটনার পরিক্রমায় তাদের স্থান হয় এই প্রবীণ নিবাসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নিবাসের এক বাসিন্দা বলেন, রোজার মাস গেল ছেলে মেয়েরা একবার খবরও নিল না। আগে প্রতি ঈদে ওরা দেখতে আসত, গত দুই বছর ধরে ঈদের দিন ও আমার খবর নেয় না। প্রথম দিকে খারাপ লাগলেও এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন অপেক্ষা করছি মৃত্যুর। হয়তোবা আমার মৃত্যুর পর ওরা আসবে কান্নাকাটি করবে, ফকির মিসকিন খাওয়াবে। কিন্তু কেউ জানবে না এই নিবাসে রাতের পর রাত আমি একা ঘুমিয়েছি এই সন্তানরা আমার খবর নেয় না।

তিনি বলেন, যখন বিকেলের দিকে বাইরে বারান্দায় বের হই তখন অনেকেই একসঙ্গে বসে গল্প করি। এই গল্পে কোনো না কোনোভাবেই পরিবারের গল্প চলে আসে। সবাই ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনিকে মনে করে আফসোস করে। আপনারা হয়তো জানেন না, এখানে যারা আছি তাদের সবার ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষিত। তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। অসুখ হলে পরিবারের সদস্যদের দেখতেও অনেকেই আসে না, যারা আসে তারাও কিছুক্ষণ থেকে কথা বলে চলে যায়। এরপর আর খবর নেয় না। তাদের দায়িত্ব কেবল মৃত্যুর পর এসে কান্নাকাটি করা।

এই নিবাসে বসবাসকারী আরেক প্রবীণ লুতফা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করা এই শিক্ষার্থীর জীবনে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর শেষ বয়সে জায়গা হয়েছে এই নিবাসে। তিনি বলেন, সংসার টিকেনি। আমার ২ বছরের ছেলেকে রেখে স্বামীর ঘর ছাড়তে হয়। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ছেলের খোঁজ পাইনি। বাবার বাসায় এসে উঠি, চাকরি করে ভাই বোনের সন্তানদের মানুষ করি। বাবা মারা যান এরপর ভাই বোন একে একে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বাবা আমার নামে যে জায়গা জমি রেখে গিয়েছিলেন তাও ওরা ষড়যন্ত্র করে নিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads